বরেন্দ্র নিউজ আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে ৭৮ দিনের লকডাউন শেষে ৮ জুন সোমবার থেকে নিউইয়র্ক সিটি পুনরায় জেগে উঠার প্রথম ধাপে পা দেবে। জনজীবন এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল করার অভিপ্রায়ে লকডাউন শিথিলের পরিক্রমায় সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও করোনাকে মানিয়ে চলা ছাড়া সামনের দিনগুলোতে আর কোন পথ খোলা নেই বলে নিউইয়র্কের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা উল্লেখ করেছেন।
এ উপলক্ষে শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়োকে অনলাইনে সাথে নিয়ে স্টেট গভর্ণর এ্যান্ড্রু ক্যুমো বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রতিটি নাগরিক যদি যত্নবান হোন তাহলে সবকিছু স্বাভাবিক হতে বেশী অপেক্ষা করতে হবে না। নিজের, পরিবারের, প্রতিবেশী, সমাজ তথা গোটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে সকলকে। এটি আইন দিয়ে সম্ভব নয়, নিজেকে সচেতন হতে হবে। স্টেট গভর্ণর এ সময় উল্লেখ করেছেন, নিউইয়র্ক সিটি অবরুদ্ধ করার ঘটনা এটাই ছিল প্রথম। আর তা করতে হয় আমাকে। এজন্যে আমিও কষ্টে দিনাতিপাত করছি। তবে সামগ্রিক কল্যাণে এর বিকল্প ছিল না।
উল্লেখ্য, এ মহামারিতে এই সিটিতে দুই শতাধিক বাংলাদেশীসহ ২৯ মে পর্যন্ত ২০ সহস্রধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কসিটিসহ সমগ্র স্টেটে মারা গেছে ৬৭ জন। এর আগের দিন সে সংখ্যা ছিল ৭৪। এই সিটিতে সংক্রমিত হয় ৫ হাজার প্রবাসীসহ দুই লক্ষাধিক আমেরিকান। স্টেট গভর্ণর উল্লেখ করেন যে, ৭ জুন পর্যন্ত সবকিছুর উন্নতি ঘটলেই শিথিলের পরিক্রমা শুরু করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সবকিছু করা হচ্ছে বাস্তবতার আলোকে। গত এপ্রিলে করোনা টেস্ট করার সময় প্রতি সপ্তাহে সংক্রমিত পাওয়া গেছে ৪০ হাজারের বেশী। অপরদিকে, গত সপ্তাহে তা নেমে ৫ হাজারে এসেছে। নিম্নগামির এই ধারা অব্যাহত থাকলে আর কোন সংশয় থাকবে না।
লকডাউন পুরোপুরি উঠিয়ে নিতে ৪ ধাপের প্রথমে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রথম ধাপে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরুতে অন্তত: চার লাখ কর্মহীন লোক কাজে ফিরতে পারবেন। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউইয়র্ক। এখানে বেসরকারি খাতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ৮ লাখ ৮৫ হাজার লোক। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাতটি নির্দেশনা পূরণ সাপেক্ষ নিউইয়র্ক শহরে নির্মাণ শিল্প, উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অতি-জরুরী নয় এমন খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ক্রেতার সঙ্গে ব্যবধান রেখে লেনদেন বা স্টোর পিক আপ পদ্ধতিতে চালু করতে পারবে। প্রথম ধাপে নির্মাণ, পোশাক এবং ইলেকট্রনিক্সের আইটেম উৎপাদনকারী এবং স্টোর ও কারখানার জন্য পাইকারি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে। ওয়ার্ক সাইটগুলো তাদের ধারণ ক্ষমতার ৫০ শতাংশেরও কম জায়গায় পরিচালনা করতে হবে। নিয়োগকর্তাদের অবশ্যই সব কর্মীকে বিনামূল্যে মাস্ক এবং পিপিই সরবরাহ করতে হবে।
ইতিমধ্যেই এই সিটিতে ৮০ লাখ মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে এবং শীঘ্রই আরো ১০ লাখ বিতরণ করা হবে বলে জানান সিটি মেয়র। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, মাস্ক ছাড়া কাউকেই নিউইয়র্ক অঞ্চলের দোকানপাট এবং কাল-কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। দোকানের কর্মচারিরাও মাস্ক পরবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করবে। ২৮ মে বৃহস্পতিবার এক নির্বাহী আদেশে নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সির গভর্ণররা এই বিধি জারি করেছেন। উল্লেখ্য, ২৮ মে ছিল নিউইয়র্কে লকডাউনের শেষ দিন। নিউইয়র্ক সিটি ছাড়া অন্য সকল এলাকায় ‘আর্থিক কর্মকান্ডসহ জনজীবন সচল করতে লকডাউন শিথিলের প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে। স্টেট গভর্ণরের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে সবকিছু ঠিক থাকলে ১৪ দিন পর দ্বিতীয় ধাপে অফিস খুলবে, রিয়েল এস্টেট সার্ভিস চালুৃ হবে, রিটেইল শপিং স্টোর খুলবে, কিছু সেলুনও খুলে দেয়া হবে।
ইনকিলাব
Leave a Reply